ঝুলন্ত সেতু

পরিচিতি

রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু একটি সরু কাঠের সেতু যা দুই পাশে লোহার তারের সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩৭ ফুট, যা কাপ্তাই লেকের এক অংশের উপর দিয়ে পারাপারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ভেতরেই অবস্থিত এই সেতু রাঙামাটির আইকনিক প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

সেতুটি মূলত স্থানীয় ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এটি পার হতে গেলে হালকা দোল খায়, যার কারণে “ঝুলন্ত” শব্দটি এর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সেতুর দুপাশে কাপ্তাই লেকের শান্ত জলের সৌন্দর্য এবং চারপাশের পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের মোহিত করে।


কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে রাঙামাটি:

  • সড়কপথে রাঙামাটি যেতে হয় চট্টগ্রাম হয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙামাটিগামী বাস পাওয়া যায় (এনায়েত পরিবহন, সৌদিয়া, S Alam, Hanif ইত্যাদি)। সময় লাগে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা

  • চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি: বাস বা মাইক্রোবাসে যাওয়া যায় (দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিমি)।

রাঙামাটি শহর থেকে ঝুলন্ত সেতু:

  • রাঙামাটি শহরের মূল কেন্দ্র থেকে ট্যাক্সি, সিএনজি বা রিকশা দিয়ে সহজেই পৌঁছানো যায়। রিজার্ভ বাজার এলাকা থেকে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের পথ।

  • এটি রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ভেতরেই অবস্থিত, যেখানে প্রবেশের জন্য টিকিট নিতে হয়।

কোথায় থাকবেন

রাঙামাটিতে থাকার জন্য অনেক ভালো মানের হোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্ট হাউস রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • পর্যটন মোটেল (Parjatan Motel) – এটি পর্যটন কর্পোরেশনের সরকারি হোটেল, ঝুলন্ত সেতুর পাশে অবস্থিত এবং দারুণ লেক ভিউ পাওয়া যায়।

  • Hotel Green Castle

  • Hotel Lake View

  • Hotel Prince

  • Banrupa Tourist Complex

টিপস:

  • ভ্রমণের মৌসুম (নভেম্বর থেকে মার্চ) হলে আগেভাগে বুকিং করা ভালো।

  • যদি লেকের পাশে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে চান, তবে লেকভিউ রুম বেছে নিন।


কোথায় খাবেন

রাঙামাটিতে স্থানীয় খাবার থেকে শুরু করে নানা রকম খাবার পাওয়া যায়:

  • পর্যটন কমপ্লেক্সের রেস্টুরেন্ট: এখানে দেশি খাবার, ভাত-মাছ-গোশতের পাশাপাশি পাহাড়ি কিছু খাবারও পরিবেশন করা হয়।

  • Peda Ting Ting Restaurant: স্থানীয় আদিবাসী খাবারের জন্য বিখ্যাত। বাঁশে রান্না করা মাংস, পাহাড়ি সবজি, টক ঝাল সুপ – সবই পাওয়া যায়।

  • Cloud 9 Restaurant: লেকভিউ সহ আধুনিক খাবার পরিবেশনা করে।

  • Local Markets: রিজার্ভ বাজারে কিছু ছোট রেস্টুরেন্টেও ভালো মানের খাবার মেলে।


করণীয় ও দর্শনীয় বিষয়

  • ঝুলন্ত সেতুতে হাঁটা এবং ছবি তোলা সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়।

  • লেকের উপরে দাঁড়িয়ে চারপাশের পাহাড় ও পানির দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

  • সেতুর পাশেই রয়েছে বোটিংয়ের ব্যবস্থা – চাইলে বোট রাইডে কাপ্তাই লেক ঘুরে দেখতে পারেন।

  • পর্যটন কমপ্লেক্সের ভেতরে ছোট একটি পার্ক, শিশুদের খেলার জায়গা, এবং কিছু হস্তশিল্প বিক্রির দোকানও আছে।


ভ্রমণ পরামর্শ

  • সকাল বা বিকেলে যাওয়া সবচেয়ে ভালো — তাপমাত্রা সহনীয় থাকে এবং ছবি তুলতে আলো উপযুক্ত থাকে।

  • বাচ্চা বা বয়স্কদের নিয়ে গেলে সেতুতে হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন, কারণ এটি খানিকটা দুলতে পারে।

  • ভ্রমণের সময় আবহাওয়ার খবর দেখে নিন — বৃষ্টি হলে সেতু ভেজা এবং পিচ্ছিল হতে পারে।


শেষ কথা:
রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু শুধু একটি স্থাপনা নয় — এটি পাহাড় ও লেকের সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করার এক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা। কাপ্তাই লেক দেখতে গেলে এই সেতু না দেখে ফিরে আসা মানেই যেন পুরো ভ্রমণটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়া।

You May Also Like

About the Author: admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *