পরিচয়
নাফাখুম ঝর্ণা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। এটি বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত এবং আমিয়াখুমের পথে অবস্থিত একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ট্রেকিং গন্তব্য। নদীর বুক চিরে গড়িয়ে পড়া এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য এতটাই মোহিত করে যে অনেক পর্যটক বারবার এই স্থানে ফিরে আসেন। স্থানীয় ভাষায় ‘খুম’ শব্দের অর্থ হলো জলপ্রপাত। নাফাখুম শব্দটি এসেছে ‘নাফা’ নামক একটি মাছ থেকে, যেটি এই জলপ্রপাতে প্রচুর পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া এই ঝর্ণাটি প্রায় ২৫-৩০ ফুট উঁচু থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে এবং নিচে একটি ছোট হ্রদ তৈরি করেছে। ঝর্ণার পানি স্বচ্ছ, শীতল এবং কখনো কখনো সবুজাভ নীলচে রঙ ধারণ করে। চারপাশের পাথুরে পাহাড় ও বুনো গাছপালায় ঘেরা পরিবেশ একে করে তোলে স্বর্গীয়।
কিভাবে যাবেন
নাফাখুম ঝর্ণায় যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে বান্দরবান শহরে। সেখান থেকে জীপ বা বাসে থানচি যেতে হয় (প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা)। থানচি থেকে ভোরবেলা নৌকায় করে রেমাক্রি যেতে হয়। রেমাক্রি থেকে শুরু হয় ট্রেকিং, যা প্রায় ২.৫-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। রাস্তাটি পাথুরে, পাহাড়ি এবং নদী পার হয়ে যেতে হয়, তাই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। স্থানীয় গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক, কারণ রাস্তাটি দুর্গম ও ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যায়।
কোথায় থাকবেন
থানচি ও রেমাক্রি উভয় জায়গায় স্থানীয়দের পরিচালিত গেস্ট হাউস, কটেজ ও হোমস্টে রয়েছে। এইসব জায়গায় থাকা খুবই সাধারণ হলেও পাহাড়ি আতিথেয়তা ও শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। কেউ চাইলে নিজস্ব তাঁবু নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পিংও করতে পারেন। তবে বর্ষাকালে বৃষ্টির জন্য ক্যাম্পিং কিছুটা কঠিন হতে পারে।
কোথায় খাবেন
থানচি ও রেমাক্রিতে ছোট ছোট খাবারের দোকান ও হোটেল রয়েছে, যেখানে ভাত, ডাল, মাছ-মাংস ও সবজি পাওয়া যায়। রেমাক্রির স্থানীয় কিছু হোমস্টেতে পাহাড়ি খাবার (যেমনঃ বাঁশের মধ্যে রান্না করা মাংস, পাহাড়ি শাক) খাওয়ার সুযোগ মেলে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিজস্ব শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা সঙ্গে রাখা ভালো।
অতিরিক্ত টিপস
- নাফাখুম ঝর্ণা যেতে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা জরুরি, কারণ রাস্তাটি অনেকটা হাঁটতে হয়।
- ভালো মানের ট্রেকিং জুতা, ব্যাকপ্যাক, রেইনকোট ও প্রাথমিক ওষুধপত্র নিতে হবে।
- মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক স্থানে থাকবে না, তাই পরিবারকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখা ভালো।
- পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কিছু ফেলা যাবে না, সব আবর্জনা সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।
নাফাখুম ঝর্ণা কেবলমাত্র একটি দর্শনীয় স্থান নয়, বরং প্রকৃতির এক নির্জন, নির্মল অভিজ্ঞতা — যেখানে মানুষ প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে যুক্ত হতে পারে।
ম্যাপ অবস্থান
