“আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত: মানবেন্দ্র লারমার পূর্ণাঙ্গ জীবনী”

 মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (১৯৩৯ – ১৯৮৩)

পরিচিতি

    মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (১৯৩৯ – ১৯৮৩)

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের জনক। তিনি ছিলেন একজন আইনজীবী, সংসদ সদস্য, এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS)-এর প্রতিষ্ঠাতা। তার নেতৃত্বেই পরবর্তীতে শান্তি বাহিনী (Shanti Bahini) গঠিত হয়।

জন্ম ও পরিবার

  • জন্ম: ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯
  • গ্রাম: মহাপুরম, বুড়িঘাট মৌজা, নানিয়ারচর, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা
  • পিতা: চিত্ত কিশোর চাকমা
  • মাতা: সুভাষিণী দেওয়ান

📌 মহাপুরম গ্রামটি কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কারণে ১৯৬০-এর দশকে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তলিয়ে যায়।

শিক্ষা জীবন

  • প্রাথমিক শিক্ষা: মহাপুরম জুনিয়র হাইস্কুল
  • ম্যাট্রিকুলেশন: রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৮)
  • এইচএসসি ও বিএ: চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ (১৯৬০ ও ১৯৬৫)
  • বিএড: ১৯৬৮
  • এলএলবি: চট্টগ্রাম আইন কলেজ, ১৯৬৯

কর্মজীবন ও রাজনীতি

শিক্ষকতা ও আইনচর্চা

  • দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু।
  • পরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হন।
  • ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বারে আইনজীবী হিসেবে যোগদান।

রাজনৈতিক অভিষেক

সাংবিধানিক বিরোধিতা

📌 তিনি সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি না থাকায় তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন।

সংগঠন ও সংগ্রাম

🔸 পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS)

  • প্রতিষ্ঠা: ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২
  • লক্ষ্য: পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য সাংবিধানিক স্বীকৃতি, স্বশাসন, ভূমির নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক অধিকার।

🔸 শান্তি বাহিনী (Shanti Bahini)

  • সরকারের সঙ্গে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ১৯৭৭ সালে তিনি শান্তি বাহিনী গঠন করেন।
  • এটি PCJSS-এর সশস্ত্র শাখা ছিল, যা গেরিলা কৌশলে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

মৃত্যু

  • তারিখ: ১০ নভেম্বর ১৯৮৩
  • স্থান: খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার খেদারাছড়া
  • কারণ: PCJSS-এর ভেতরে মতবিরোধের কারণে ভিন্নমতাবলম্বী গ্রুপ ‘গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ’-এর হামলায় নিহত হন।

উত্তরাধিকার ও প্রভাব

স্মরণীয় উক্তি

“আমি বাঙালি নই, আমি চাকমা। আমি পাহাড়ি মানুষ। আমাদের নিজস্ব পরিচয় আছে, সংস্কৃতি আছে, ভাষা আছে। আমরা আলাদা জাতিসত্তা।”
— মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, ১৯৭২

উপসংহার

মানবেন্দ্র লারমা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য নেতা। তিনি প্রমাণ করেছেন, একটি জাতিগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার, ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের জন্য শান্তিপূর্ণ এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র আন্দোলন – দুটোই হতে পারে বৈধ সংগ্রাম। আজও তিনি পাহাড়ি জনগণের জন্য আত্মপরিচয়ের প্রতীক ও স্বাধীন চিন্তার আলোকবর্তিকা।

 

You May Also Like

About the Author: admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *