🔹 পরিচিতি
ম্রো (বা মুরং) জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি স্বতন্ত্র পাহাড়ি জাতি, যারা প্রধানত বান্দরবান জেলায় বাস করেন। তারা নিজেদের “ম্রো” বলে অভিহিত করেন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে গভীরভাবে নিবিষ্ট জীবনযাপন করেন। সাধারণত দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করায় এরা অনেকাংশেই মূলধারার সমাজ থেকে আলাদা জীবনযাপন করে।
🔹 ভাষা ও লিপি
ম্রো ভাষা টিবেটো-বার্মান ভাষাপরিবারের অন্তর্গত। ভাষাটি একসময় পুরোপুরি মৌখিক ছিল, তবে ১৯৮০-এর দশকে ম্রো পণ্ডিত মেনলুয়াই একটি স্বকীয় লিপি আবিষ্কার করেন – যাকে “ম্রো লিপি” বলা হয়। এ লিপি এখন ম্রো শিক্ষাকেন্দ্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যদিও এর ব্যবহার এখনো সীমিত।
🔹 লোককাহিনি
ম্রোদের লোককাহিনিতে আত্মা, পরলোক, দেবতা, পশু ও প্রকৃতির গভীর সম্পর্ক ফুটে ওঠে। “হ্লাঞ্জুং দেবতার আগমন”, “সোনালী পাখির রাজ্য” প্রভৃতি কাহিনিতে আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিক শিক্ষা রয়েছে। এছাড়া তাদের কাহিনিতে সামাজিক একতা ও সহনশীলতার দৃষ্টান্ত প্রচুর পাওয়া যায়।
🔹 পোশাক ও সংস্কৃতি
ম্রো নারীরা সাধারণত কোমরে কাপড় জড়িয়ে একটি সাদা বা রঙিন টুকরো কাপড় (টিউনিকের মতো) পরেন। পুরুষরা পরে ছোট এক টুকরো লুঙ্গি সদৃশ কাপড়। তাদের পোশাকে সরলতা ও পরিবেশবান্ধবতা রয়েছে। বাঁশ দিয়ে গৃহনির্মাণ, ঝুম চাষ, নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে উৎসব উদযাপন – সবই ম্রো সংস্কৃতির অংশ। লবেং বঙ নামে পরিচিত একটি ঐতিহ্যবাহী বাঁশি তাদের সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ।
🔹 ধর্ম ও বিশ্বাস
ম্রোরা মূলত আদিবাসী ধর্মবিশ্বাস পালন করেন, যা প্রকৃতি পূজা, পূর্বপুরুষের আত্মা পূজা, এবং বিভিন্ন দেবতার আরাধনায় প্রকাশ পায়। যদিও সাম্প্রতিক কালে কিছু ম্রো খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন, তবে অধিকাংশ এখনো প্রাকৃতিক উপাসনায় বিশ্বাসী। তারা “থুরী” ও “থ্যাং” নামক দেবতার কাছে প্রার্থনা করে।
🔹 সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ
ম্রো জনগোষ্ঠী তাদের জমি, জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বনভূমি অধিগ্রহণ, বিদ্যুৎ প্রকল্প, ও পর্যটন ব্যবসার কারণে অনেক ম্রো পরিবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। ভাষা ও লিপি টিকিয়ে রাখাও এক বড় চ্যালেঞ্জ। আধুনিক শিক্ষার সুযোগ সীমিত হওয়ায় ম্রো শিশুরা পিছিয়ে পড়ছে।