🔹 পরিচিতি
বম জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি ছোট কিন্তু সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ আদিবাসী গোষ্ঠী। তারা মূলত বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি এবং রোয়াংছড়ি উপজেলায় বসবাস করে। বমরা নিজেদের “বোম” বা “বৌম” বলে পরিচয় দেয় এবং তারা মূলত চীন-মায়ানমার সীমান্তঘেঁষা এলাকা থেকে এই অঞ্চলে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।
🔹 ভাষা ও লিপি
বম ভাষা টিবেটো-বার্মান ভাষাপরিবারের অন্তর্গত এবং এটি মিজো ভাষার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। বম ভাষার নিজস্ব কোনো প্রাচীন লিপি নেই, তবে বর্তমানে রোমান হরফ ব্যবহার করে বম ভাষায় লেখালেখি করা হয়, বিশেষত খ্রিস্টান মিশনারি কার্যক্রমের কারণে। এই ভাষা প্রধানত মৌখিক সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ।
🔹 লোককাহিনি
বমদের লোককাহিনিতে রয়েছে বীরত্বগাথা, সৃষ্টিতত্ত্ব, প্রেম, আত্মত্যাগ ও শিকারজীবনের গল্প। “খাংলুই আর বোয়াইয়ের প্রেম”, “রামথাং পাহাড়ের অভিশাপ” ইত্যাদি কাহিনিগুলো পুরান ও উপকথার মিশেলে রচিত। এরা বিভিন্ন উৎসবে গান ও কাহিনি মিলিয়ে পারফরমেন্স করে, যাকে বলা হয় “থিলেং“।
🔹 পোশাক ও সংস্কৃতি
বম নারীরা সাধারণত পরেন রঙিন, আঁটসাঁট লুঙ্গির মতো স্কার্ট ও একটি হালকা ব্লাউজ বা কোটজাতীয় পোশাক। পুরুষরা পরে লুঙ্গি ও শার্ট। বমদের সংস্কৃতিতে খ্রিস্টান প্রভাব থাকলেও ঐতিহ্যবাহী গানের দল, তাঁতের কাজ, এবং লোকসংগীত এখনো সংরক্ষিত। তারা বাঁশের বাঁশি, ঢোল এবং ‘গিটকি’ নামক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে।
🔹 ধর্ম ও বিশ্বাস
বর্তমানে বমদের অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে ব্যাপটিস্ট মতবাদ অনুসরণ করে। তবে অতীতে তারা প্রকৃতি পূজা ও পূর্বপুরুষ উপাসনায় বিশ্বাসী ছিল। খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের পর তাদের সংস্কৃতিতে গির্জা, বাইবেল পাঠ, গসপেল গান, ও রোববারের উপাসনা গুরুত্ব পেয়েছে।
🔹 সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ
বম জনগোষ্ঠী সংখ্যা ও ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে আছে। সরকারি সেবার প্রবেশাধিকার সীমিত এবং ভাষা ও সংস্কৃতির টিকে থাকা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শহরমুখী প্রবণতা বাড়ছে, যা ঐতিহ্যিক সংস্কৃতিকে ঝুঁকিতে ফেলছে।