
🔹 পরিচিতি
চাকমা জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বৃহৎ আদিবাসী গোষ্ঠী। মূলত রাঙামাটি জেলায় এদের বসবাস, তবে বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতেও তারা অবস্থান করে। চাকমাদের ভাষা, পোশাক, ধর্ম ও সামাজিক রীতিনীতিতে বৌদ্ধধর্মীয় ও ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব সুস্পষ্ট। চাকমারা নিজেদের ‘চাক’ জাতির বংশধর বলে মনে করেন, যাদের উৎস ভারতের আরাকান ও ত্রিপুরা অঞ্চলে।
🔹 ভাষা ও লিপি

চাকমারা চাকমা ভাষায় কথা বলেন, যা ইন্দো-আর্য ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। এ ভাষার নিজস্ব লিপি রয়েছে— চাকমা লিপি (Ajhā Pāṭh), যা অনেকটা পালি ও প্রাচীন ব্রাহ্মী লিপির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যদিও অনেক চাকমা এখন বাংলায় শিক্ষা গ্রহণ করে, সম্প্রতি চাকমা ভাষা সংরক্ষণ ও শিক্ষার প্রচেষ্টা বাড়ছে।
🔹 লোককাহিনি
চাকমা লোকসংস্কৃতিতে বহু পুরাণকথা ও রূপকথা প্রচলিত রয়েছে। এদের কাহিনিতে প্রকৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও মানবিক মূল্যবোধ ফুটে ওঠে। যেমন, “রাজা বরবাকের রাজত্বকাল” বা “সুন্দরী ও দৈত্যের কাহিনি” নামক গল্পগুলো লোকমুখে বহুল প্রচলিত। চাকমা কবিয়ালরা চটুল ছন্দে গীতিকবিতা ও উপদেশমূলক ছড়া রচনা করেন।
🔹 পোশাক ও সংস্কৃতি
চাকমা নারীরা পরেন “পিনন” (স্কার্টের মতো) ও “খাদি” (ব্লাউজ জাতীয় পোশাক)। পুরুষরা সাধারণত “ধুতি” ও জামা পরে। চাকমা নারীরা বয়নশিল্পে অত্যন্ত দক্ষ; তাদের হাতে তৈরি তাঁতের কাপড় দেশের বাইরেও সমাদৃত। চাকমা সমাজে বর্ষবরণ উৎসব “বিজু” অন্যতম প্রধান সংস্কৃতিক উৎসব, যেখানে গান, নৃত্য ও পানিতে ফুল ভাসানো হয়।

🔹 ধর্ম ও বিশ্বাস
চাকমারা প্রধানত থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করেন। গ্রামভিত্তিক বিহার ও ভিক্ষুদের প্রভাব সমাজে দৃঢ়। পাশাপাশি লোকবিশ্বাস, পূর্বপুরুষ পূজা, ও আত্মা বিশ্বাস (spirit worship) কিছুটা প্রভাবশালী। ধর্মীয় আচারে পঞ্চশীল ও অষ্টশীল পালন করা হয়। পূর্ণিমা ও বুদ্ধপূর্ণিমা চাকমা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ দিন।
🔹 সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ
চাকমা জনগোষ্ঠী বর্তমানে জমির অধিকার, ভাষা সংরক্ষণ, ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সংগ্রাম করছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে বহু চাকমা পুনর্বাসন, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। তাছাড়া শহরাঞ্চলে অভিবাসনের ফলে যুব সমাজে মাতৃভাষার ব্যবহার কমে যাচ্ছে।